মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে মানবজমিন পত্রিকার রিপোর্ট দেখে আমি দারুনভাবে অবাক ও বিস্মিত: ডাঃ শফিকুর রহমান রায়পুরে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ক্যারিয়ার ডিজাইন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত  বিএনপি নেতাকে হত্যার ১০ বছর পর হাসিনার নামে মামলা ফরিদগঞ্জে বাজার মনিটর করেছে বিশেষ টাস্কফোর্স ফরিদগঞ্জে ইউনিয়ন যুবদলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত রায়পুর পৌর জামায়াতের উদ্যোগে সীরাতুন্নবী মাহফিল অনুষ্ঠিত ফরিদগঞ্জে তথ্য সংগ্রহ গেলে সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নেন দলিল লেখক আব্দুল করিম ৫০টি চড়-থাপ্পড়েই বাড়বে নারীদের সৌন্দর্য! রায়পুরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে চাল বিতরণ লক্ষীপুরে দেড় যুগ পর প্রকাশ্যে রুকন সম্মেলন করল জামায়াতে ইসলামী

শিক্ষকের মর্যাদা আজ কোথায়!

দেশ যুগান্তর প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪
  • ২৩৭ বার দেখা হয়েছে

মোবারক হোসাইন : প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাকাঠামোর একটি ভিন্ন চিত্র ছিল। শিক্ষকের অপরিসীম মর্যাদা ছিল। তখনও বইপত্রের যুগ শুরু হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষার একটি ধারা ছিল গুরুগৃহে জ্ঞানচর্চা।

রাজা-মন্ত্রীর ছেলেরা গুরুগৃহে বিদ্যাচর্চা করতেন। গুরু অর্থাৎ সন্ন্যাসীরা বনের ভেতর কুটিরে জীবন-যাপন করতেন। ধর্মচর্চা করতেন। রাজা-মন্ত্রী তাদের ছেলেদের নিয়ে এসে করজোড়ে প্রার্থনা জানাতেন। অনুনয় করতেন গুরু যাতে তাদের সন্তানদের দায়িত্ব নেন। রাজপুত্র, মন্ত্রিপুত্ররা গুরুর কুটিরে থেকে গুরুর সেবা করে জ্ঞানার্জন করতেন। এখন সেই সত্য যুগও নেই, শিক্ষকের মর্যাদাও নেই।

সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষকরা মানুষের ভেতর সত্যিকারের মানুষ সৃজন করেন। তাই শিক্ষককে বলা হয় সন্তানের দ্বিতীয় জন্মদাতা। সত্যি তো, জন্মদাতা পিতা শুধু জন্ম দিয়েই থাকেন; কিন্তু তাকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তোলেন তার শিক্ষক। জ্ঞান বা বিদ্যার্জনের জন্য শিক্ষকদের ভূমিকাকে দ্বিতীয় জন্মদাতার সঙ্গে তুলনা করে শাহ মুহম্মদ সগীর কবিতার ছন্দে লিখেছেন-

‘ওস্তাদে প্রণাম করো পিতা হন্তে বাড়,
দোসর জনম দিলা তিঁহ সে আহ্মার।’

যুগে যুগে, কালে কালে স্মরণীয় ব্যক্তিরা তাদের শিক্ষকদের প্রতি সবিনীত শ্রদ্ধাশীল থেকেছেন। ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) শিক্ষকের প্রতি তার শ্রদ্ধার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমার শিক্ষক ইমাম হাম্মাদ (রাহ.) যত দিন বেঁচেছিলেন, তত দিন আমি তার বাড়ির দিকে পা মেলে বসিনি। আমার মনে হতো, এতে যদি শিক্ষকের প্রতি আমার অসম্মান হয়ে যায়।

কবি কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি আজকাল শিক্ষকের সম্মানের বিষয়ে এখন রূপকথামাত্র। বাদশাহ আলমগীরের ছেলে শিক্ষকের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন, এখন পুরো গা ধুয়ে দিচ্ছে। পাঁজাকোলো করে পুকুরে ফেলে দিচ্ছে। হামেশাই শিক্ষকরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন।

ভবিষ্যৎ বংশধরদের যোগ্য-দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলোতে তাই বেতন ও সামাজিক অবস্থানে শিক্ষককে অনেক উপরে রাখা হয়।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। আমাদের দেশে একজন প্রভাষকের মূল বেতন ২২ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপকের ৩৫ হাজার ৫০০ এবং অধ্যাপকের ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। ভারতে শিক্ষকতা শুরু সহকারী অধ্যাপক দিয়ে। সহকারী অধ্যাপকদের বেতন স্কেল ৫৫ হাজার টাকা, সহযোগী অধ্যাপকের ৯০ হাজার টাকা এবং অধ্যাপকের ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। পাকিস্তানে সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন ১ লাখ ৪ হাজার টাকা, সহযোগী অধ্যাপকের ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং অধ্যাপকের ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এর বাইরে গবেষণা, আবাসন, যাতায়াতের জন্য গাড়িসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা পান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আর উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর শিক্ষকদের বেতন আরও কয়েক গুণ বেশি। ভারত সরকার মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় টানতে বেতনকাঠামোতে সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি ও উপযুক্ত মর্যাদা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ভারতের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশে শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘Teachers in various categories should be given incentives by way of advance increments and higher grade pay to compensate them for higher qualifications at the entry point. Also, it would be a significant incentive for more meritorious scholars to join the teaching profession, particularly at this juncture when both the corporate sector and foreign educational institutions are luring the young talented persons away with higher salaries and better pay packages’.

১৮৫০-এর দশকে বাঙালিদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি বেতন পেতেন, বিদ্যাসাগর তাদের অন্যতম। তা সত্ত্বেও কেবল শিক্ষানীতিতে সরকারের সঙ্গে একমত হতে পারলেন না বলে, আদর্শের কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। সাধারণ লোকেরা তখন নাকি তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বিদ্যাসাগর চাকরি ছাড়লে খাবেন কী করে?’ তার উত্তরে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, তিনি আলু, পটোল বিক্রি করবেন, তা-ও ভালো। কিন্তু আপস নয়।

বলা হয়ে থাকে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক হলো মেরুদণ্ড সচল-সুস্থ রাখার তথা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকরা জ্ঞানের আলো দ্বারা যুগের সব অন্ধকার দূর করে মানুষের জন্য সভ্য পৃথিবী সৃজন করেন। মানুষের আর্থসামাজিক অগ্রগতি ও নৈতিক বিকাশ অব্যাহত রাখতে সমাজে শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আমাদের YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 Desh Jugantor
Design & Developed by RJ Ranzit
themesba-lates1749691102